জার্মানিতে স্টুডেন্ট অবস্থায় সেভিংস কেমন হয় এই বিষয়ে অনেকেই জানতে চান। আজকে আপনাদের একটা ওভারঅল ধারনা দিতে চাই সাথে আমার টুকটাক কিছু পর্যবেক্ষণ।
জার্মানিতে আপনি টোটাল ১২০ দিন ফুলটাইম কিংবা ২৪০ দিন পার্ট টাইম কাজ করতে পারবেন। ফুলটাইম মানে ৮ ঘন্টা আর পার্ট টাইম মানে ৪ ঘন্টা। কিন্তু আপনি যদি ৩ ঘন্টার শিফট করেন সেটাও পার্ট টাইম হিসাবে কাউন্ট হবে। আবার ৫ ঘন্টার শিফট করলে ফুলটাইম হিসাবে কাউন্ট হবে। এই সিস্টেমটা আমার ভালো লাগে নাই। কিন্তু কি করার। রুলস তো মানা লাগবে।
মাসের কিছু খরচ ধরেন শিওর থাকবে। এগুলো যাই করেন না কেন আপনার খরচ হবেই।
বাসা ভাড়া
হেলথ ইন্সুরেন্স
রেডিও বিল
মোবাইল বিল
এখন আপনার সিটি ভেদে বাসা ভাড়া কম বেশি হবে৷ আমি এভারেজ ৩৫০ ধরে নিলাম।
তাইলে আপনার মাসে ফিক্সড খরচ
বাসা ভাড়া- ৩৫০
হেলথ ইন্সুরেন্স- ১২৫
রেডিও বিল- ১৮
মোবাইল বিল- ৭ (ধরে নিলাম)
টোটাল আপনার ফিক্সড খরচ যেগুলো শিওর যাবেই তা হলো ৫০০ ইউরো। এবার এর সাথে আরেকটা ইস্যু যোগ করেন। প্রতি ৬ মাসে তো এনরোলমেন্ট ফি দেন৷ সেটারে ধরে নিলাম প্রতি সেমিস্টারে ২৪০ দেন। তো মাসে পরতেছে ৪০ ইউরো করে। এটারেও মাসের হিসাবে যোগ দিলে হলো ৫৪০ ইউরো। অর্থাৎ যাই করেন না কেন এই ৫৪০ ইউরো আপনাকে দিতেই হবে। তা না খেয়ে থাকলেও।
এবার বাকি খরচ ডিপেন্ড করে আপনার উপর। ইউরোপের বর্তমান বাজারের যে অবস্থা তাতে এভারেজে মানুষ ১৫০ ইউরো খরচ করেই বাজারের পেছনে। আমার ২৫০ যায়। তো এটা ডিপেন্ড করে কে কতো পারসোনাল খরচ করবেন৷
তো যদি ১৫০ ধরি তাহলে এখন মাসের মোট খরচ দাড়ালো ৫৪০+১৫০ = ৬৯০। এখন কিছু এক্সট্রা খরচ ধরে নিন আদারস হিসাবে ধরেন ২০ ইউরো। তাইলে মাসের টোটাল খরচ ৭১০ ইউরো৷ দেখেন ভাই খাবার আপনি ৫০ ইউরোতে কম্পলিট করতে পারলে এই খরচ ৬১০ হবে। তাই আমি একটা এভারেজ খরচের হিসাব দিলাম। ৭১০ স্ট্যান্ডার্ড এভারেজ ধরে নিলাম।
এবার কথা হলো আপনি ইনকাম করবেন কতো। ধরে নিলাম আপনি মাসে ৮০ ঘন্টা ন্যুনতম ১২ ইউরো স্যালারিতে কাজ করেন। এতে আপনার নেট স্যালারি ৯৬০ হবে৷ এর থেকে ট্যাক্স বাবদ ৯৬ টাকা কেটে নিলো। থাকবে ৮৬৪ ইউরো। আর খরচ বললাম ৭১০ ইউরো। তাহলে আপনার সেভিংস ১৫৪ ইউরো। আজকের ইউরো রেটের হিসাবে ২০ হাজার টাকা প্রায়।
এর চেয়ে বেশি কি সেভিংস সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব। আপনি পার্ট টাইমের পাশাপাশি একটা মিনি জব করতে পারেন। তাতে যে টাকা পাবেন তা পুরোটাই সেভিংস হিসাবে থাকবে৷ মিনি করে ৫২০ ইউরো পর্যন্ত কামানো যায়। তবে একটা পার্ট টাইম + মিনি করে অনেক কষ্ট হয়ে যায়৷ কেননা পড়ালেখা বাসার কাজ কাম সব লাঠে ওঠে।
আবার ধরেন ডেলিভারি বা রেস্টুরেন্টে জবে টিপসের মতো বিষয় থাকে। সেখান থেকে এক্সট্রা সেভিংস আনতে পারেন। আবার ধরেন জবভ্যালি কিংবা সেনজব থেকে দিন ঘন্টা হিসাবে কাজ করেও সেভিংস আনতে পারেন। তো মোদ্দা হিসাব হলো জার্মানিতে ন্যুনতম স্যালারিতে ৮০ ঘন্টা কাজ করে এভারেজ খরচ করলে মাসে ১৫০-২০০ ইউরো সেভ করা সম্ভব। এর সাথে অন্য কোন মিনি জব করলে সেটা আরো বাড়ানো সম্ভব। খরচের উপর সেভিংস ডিপেন্ড করে। এক্সট্রা অনেক রেগুলার খরচ থাকতে পারে। যেমন যেকোন কিছু ইএমআইতে কিনলে সেটার মান্থলি খরচ দিতে হয়। সত্যি বলতে আমি দেখেছি বাংলাদেশীরা অনেক খরুচে হয়। জার্মানির একেক অঞ্চলে একেক সুপারশপ ফেমাস, অঞ্চল ভেদে একেকটা আলাদাভাবে এক্সপেন্সিভ৷ যেমন ধরেন আমার সিটিতে এডেকা বেস্ট কোয়ালিটির ফুড প্রোভাইড করে আবার দামও বেশি৷ কিন্তু এডেকাতে আমি যতো বাঙালী দেখি তার ধারে কাছেও কোন ভারতীয় বা পাকিস্থানীকে দেখি না। অথচ এখানে ভারতীয় পাকিস্থানী অনেক। ওরা খরচ কমাতে রেভের সাবব্র্যান্ড পেনি কিংবা এডেকার সাবব্র্যান্ড নেটোতে যায়। ওসবে খরচ অনেক কম পরে। তার উপর বাঙালী পোলাপান তো বাঙলা দোকানে গেলে লোভে পরে মাছ তরকারী কিনেই ফেলে। সব মিলে আমাদের খরচের লিমিট দেখলে ইন্ডিয়ান পাকিস্থানীরা কিছুটা হয়তো অবাকও হয়।
আমি জার্মানিতে এমনো মানুষ দেখি যারা ৫০ ইউরোতে মাসের বাজার করে, আবার এমনো দেখি ২৫০ তেও করে (আমি নিজেই)। তাই সেভিংসের বিষয়টা এসবের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে৷ কিন্তু ওভারঅল একটা ধারনা দিলাম আপনাদের। আশা করি এ থেকে উপকৃত হবেন। জার্মানিতে থাকা ভাই বোনদের থেকেও জানতে চাই আপনারা কিরকম সেভ করতে পারেন। আর নতুনদের প্রতি অনুরোধ বেশি কামাই করতে গিয়ে পড়ালেখা লাঠে উঠাবেন না। আল্লাহ সবার মঙ্গল করুন। আমীন।
Hasibul Islam Polok