কী সাবজেক্ট নিলে ভাল হবে?

ধরেন, জগদীশ চন্দ্র বসুকে যদি গণিত পড়তে বলা হতো তাহলে কি তিনি গাছের প্রাণ আছে তা আবিষ্কার করতে পারতেন? নাকি রবীন্দ্রনাথকে রকেট সাইন্স পড়ালে তিনি গীতাঞ্জলী উপহার দিতে পারতেন? অথবা ডঃ ইউনূস স্যার যদি পড়তেন রসায়ন?

হ্যাঁ হয়তো যারা ভাল তারা যেকোন বিষয়েই ভাল করতে পারবে কিন্তু সর্বোচ্চ ভালটা কি দিতে পারবেন? আবিষ্কার বা সমাজ বদলানোমূলক ধারণাগুলি কি আসতো? হতেই পারে একজন কম্পিউটার বিশারদ ছাপোষা চাকরি করেই জীবন পার করে দিলো অন্যদিকে একজন সামাজিক বিজ্ঞানের ছাত্র নতুন গাঠনিক সমাজের আধুনিক জীবনের সূত্র বের করে ফেললো? আবার কাড়ি কাড়ি টাকা কামিয়েও ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা ফার্মাসিস্ট ভুগতে পারেন ডিপ্রেশনে…. অন্যদিকে জাপানীজ ভাষা বা লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্টে পড়া কোন শিক্ষার্থী বানিয়ে ফেলতে পারেন সুগঠিত ক্যারিয়ার, জাপানে বা বিশ্ববিখ্যাত কোন লাইব্রেরীতে যার পাঠকসংখ্যা মিলিয়নেরও বেশি….. তাহলে?

সুখ কিসে? টাকা কিসে? সম্মান কিসে? এসবকিছুই চিন্তায় আসে সাবজেক্ট চয়েজ করবার ক্ষেত্রে। চায়নাতে প্রফেসররা চান্সপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদেরকে তাদের ল্যাব ও ফ্যাসিলিটি ঘুরিয়ে দেখান। যেন শিক্ষার্থীরা নিজে দেখে শুনে বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে কোন বিষয়ে বা কোন ল্যাবে সে কাজ করবে। কিন্তু আমরা যেহেতু বাংলাদেশে তাই প্রথমেই কোন বিশ্ববিদ্যালয় চয়েজ করবেন তার জন্যঃ

  1. নিউজপেপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বিগত ২ বছরের কি কি উন্নয়ন বা কেলেঙ্কারীর খবর ছেপেছে তা দেখুন, সে বিষয়ে ওখানকার শিক্ষার্থীরা কতটা সরব তা পড়ুন, মরাগরুদের সাথে পড়লে আপনিও ভবিষ্যত বকনা বাছুর হয়ে যাবেন তাতে ভুল নেই…
  2. কোন কোন বিষয়ের শিক্ষক কি কি গবেষণা করে দেশ উদ্ধার করেছেন তা দেখুন…. দেশের ব্যাপারে তাদের মনোভাব মাপুন ফেসবুকীয় বিদ্রোহী বা তেলাতেলির পোস্টগুলি পড়ে…
  3. কোন কোন বিষয়ের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশী চাকরী পেয়েছেন তা শুনুন বড়ভাই/বোনদেরকে কল দিয়ে… মেয়ে আইডি এক্ষেত্রে কেন জানি সবচেয়ে বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারে… -_-

এবার বিশ্ববিদ্যালয় চয়েজ হলে ও চান্স পেলে সেখানকার বিষয়গুলি নিয়ে বসুন। আর্টস বা কমার্স বলে বিষয়গুলি কে অবহেলা ও সাইন্স বলে বিষয়গুলিকে প্রাধান্য- এধরনের মেন্টালিটি ছেড়ে দিন। নিচের বিষয়গুলি অনুযায়ী র‌্যাংকিং করুনঃ

  1. কোন বিষয়টি আপনার পছন্দ
  2. কোন বিষয়ের সব বড় ভাইরা মোটা অংকের চাকুরী করছেন
  3. কোন বিষয়টি বিশ্বে আগামী ৫ বছর পরেও চাকুরী ডিমান্ড থাকবে
  4. কোন বিষয়টি পেলে আপনি নিজে কিছু না কিছু বানিয়ে ফেলবার/আবিষ্কারের চেষ্টা করবেন
  5. কোন বিষয়টির শিক্ষকগণ বন্ধু ভাবাপন্ন (এক্ষেত্রে ছেলেদেরকে জিগ্যেস করা ভাল কারণ কেন যেন প্রায়ই দেখি অধিকাংশ Sheক্ষক গণ মেয়েদের প্রতি বেশি বন্ধু ভাবাপন্ন ফলে মেয়ে আইডি দিয়ে নক দিলেও সত্য কথা বের হবে না; যদিও সবাই এক নন)
  6. কোন বিষয়টি হতে বিগত বছরগুলিতে সেশনজট তেমন ছিল না
  7. কোন বিষয় হতে বিদেশে বেশিসংখ্যাক বড় ভাই গিয়েছেন (বিদেশে গিয়ে কি তিনি বিষয়ভিত্তিক ডিম পাড়ছেন নাকি ড্রেন পরিষ্কার করছেন তা দেখে নেয় গেলে আরও ভাল)
  8. কোন বিষয় হতে বিসিএস পাওয়া সহজ…
  9. কোন বিষয় পড়ার পর কোন চাকরি না পেলেও দোকানদারি করেও দিন পার করা যাবে…

এবার বিষয়গুলিকে ১,২,৩,৪ এভাবে সাজানোর পর বিসমিল্লাহ বলে শুরু করুন লোকের মতামত নেয়া। অবশ্যই প্রতিটা বিষয়ের প্রথম সারির বড় ভাই/বোন এবং শেষ সারির নেতা/গৃহিনী হতে জানবেন যে ওই বিষয় পড়লে ভবিষ্যতে কি কি চুল ছেঁড়া যাবে, তারা কতটা ছিড়েছে এবং আপনার দ্বারা তা হবে কিনা…. তারপর হাজতের নামাজ পড়ুন… দেখবেন মনটা ইনশাল্লাহ একটা সাবজেক্টের দিকে টানছে…. ব্যাস !!!

এরপর ঝাঁপান….. জয় বাংলা 🙂

আমি চাইনা কোন ডঃ শহীদুল্লাহ জীববিজ্ঞান পড়ুক, না আমি চাই অমর্ত্যসেন পড়ুক কৃষিবিজ্ঞান, আমি চাই যে ভবিষ্যতের নেতা তিনি পড়ুন রাষ্ট্রবিজ্ঞান, যে কামার সে পড়ুক মেকানিক্যাল, যে জেলে সে পড়ুক ফিসারীজ….. 😉 সুতরাং এত দ্বিধা-দ্বন্দের কিছু নেই…. বর্তমানের হিসেবে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় বিষয়টি বেছে নিন… বাকিটা স্রষ্টার উপর ছেড়ে দিন…. মনে রাখতে হবে ডঃ জাকির নায়েক একজন চিকিৎসক, আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান একজন আইনজ্ঞ আর ৭টা মোবাইল এপ্লিকেশন বানানো এই আমি একজন সমুদ্রবিজ্ঞানের ছাত্র 😉 হাহাহাহা 😛

বিষয় মানুষের ভবিষ্যতের একাংশ হয়তো ঠিক করে, কিন্তু মানুষের মতো মানুষ হতে না পারলে বাকি অংশজুড়ে থাকে মনোঃকষ্ট, সবকিছু পাবার পরও অতৃপ্তি…. তাই ভাল পরিবেশ, ভাল মানুষ, ভাল বন্ধু, স্নেহশীল সিনিয়র চয়েজ করুন…. জীবন সুন্দর হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ তা আপনি যে সাবজেক্টই চয়েজ করেন না কেন….

কিন্তু কথা হলো এত কাজ কে করবে? এতকিছু ভাবনার সময় কি এই ডিজিটাল জেনারেশনের রয়েছে? আমার কথা সিম্পলঃ গুরুত্ব দিয়ে জীবনের ডিসিশন না নিলে সময়মতো ওই ডিসিশনই খেলে দিবে জীবনটাকে…. তাই সময় থাকতে সাধু সাবধান!!!

সকলের জন্য রইলো শুভ কামনা 🙂 আমার জন্য দুয়া করবেন। আমিন। 🙂

লিখেছেন- শাহানুল ইসলাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *