স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল ফান্ডিং ছাড়াও কোরিয়াতে উচ্চশিক্ষায় ফান্ডিং পাওয়ার অন্যতম বড় একটা উৎস হচ্ছে “প্রফেসর’স ফান্ডিং”। এই ফান্ডিং পেতে নিচের তিনটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১। প্রথমত, আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড (লেখাপড়া + গ্রেড পয়েন্ট + পূর্ববর্তী গবেষণা + ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা)।
২। দ্বিতীয়ত, প্রফেসর খুঁজে বের করা।
৩। তৃতীয়ত হচ্ছে আপনার ভাগ্য।
প্রফেসরদের ইমেইল করার সাথে সম্পৃক্ত কিছু ভুল ধারণা নিয়ে প্রথমেই একটু কথা বলে রাখি।
ভুল ধারণা – ১। প্রথমে কিছু টপ-র্যাংকের বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজতে হবে এবং শুধু ঐসব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদেরকেই ইমেইল করতে হবে।
আপনি যদি সেল্ফ-ফান্ডিং নিয়ে কোরিয়াতে আসতে না চান, তাহলে ইউরোপ-আমেরিকার মত প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজা এবং সেই অনুযায়ী পরবর্তীতে প্রফেসরদের ইমেইল করার মত কাজটা না করায় ভালো হবে। কোরিয়াতে গবেষণার কাজটা খুবই উচ্চমানের এবং এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোফাইলের চেয়ে প্রফেসরদের পার্সোনাল প্রোফাইলের উপর বেশি নির্ভর করে।সুতরাং, উচ্চশিক্ষায় আগে বিশ্ববিদ্যালয় সিলেক্ট না করে প্রফেসর খুঁজে বের করায় শ্রেয়। কিভাবে প্রফেসর খুঁজবেন সেটা যদি খুব সংক্ষেপে বলি, প্রথমে যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে আপনার গবেষণার টপিকটি খুঁজে বের করুন। তারপর সেখান থেকে আপনার গবেষণার সাথে মিলে যায় এমন কয়েকজন প্রফেসর কে খুঁজে বের করুন। বিকল্প হিসাবে, কোন রিসার্চ পেপার বা রিসার্চগেট বা গুগল স্কলার প্রোফাইল থেকে আপনি আপনার পছন্দের কোরিয়ান প্রফেসর খুঁজে বের করতে পারবেন। মনে রাখবেন, এসোসিয়েট প্রফেসরদের ফান্ড বেশি থাকে।
ভুল ধারণা – ২। আমি তো এখনো অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষা দেয়নি, আমার রেজাল্ট তো এখনো পাবলিশ হয়নি, আমার তো আইইএলটিএস বা টোফেল দেয়া নেই আমার কি প্রফেসরদের ইমেইল করা ঠিক হবে? আমাকে কি প্রফেসর রিপ্লাই দিবে বা নিতে চাইবে?
আমি বলব এইসব নিয়ে চিন্তা করার কোন কারণই নেই।আপনাকে প্রফেসর রিপ্লাই দিবে কিনা সেটা আপনি একটা ভাষায় কতটুকু দক্ষ শুধুমাত্র সেটার উপরে নির্ভর করে না। একজন কোরিয়ান প্রফেসর আপনার আগের বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রেড পয়েন্ট এবং বিশেষত আপনার রিসার্চ এক্সপেরিয়েন্স সহ সবকিছুই দেখবে। আপনার রেজাল্ট পাব্লিশ না হলে বা আইইএলটিএস না দেওয়া থাকলে প্রফেসরকে সম্ভাব্য তারিখ জানিয়ে দিন। মনে রাখবেন প্রফেসর খোঁজা শুরু অনার্স চতুর্থ বর্ষের প্রথম থেকেই করা উচিত।এক্ষেত্রে, প্রফেসরদের আপনার সম্ভাব্য আবেদনের সেশন উল্লেখ করতে ভুলবেন না। সর্বোপরি, আপনাকে নেওয়া বা না নেওয়া এটা প্রফেসরের নিজের মর্জির উপর নির্ভর করে।
ভুল ধারণা – ৩। আমি বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছি, আমি তো আমার ব্যাচের টপার ছিলাম, বা আমার সিজিপিএ অনেক ভালো; আমাকে তো প্রফেসর রিপ্লাই দিবেই।
এটি অন্যতম একটি বড় ভুল ধারণা, যেটা যতসম্ভব পরিহার করে ভালো।আপনি প্রফেসরকে এবং তার কাজ সম্পর্কে কতটুকু জানেন,এবং তাকে ইমেইল করার আগে তার প্রোফাইল সম্পর্কে কতটুকু জেনে ইমেইল করেছেন সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একজন কোরিয়ান প্রফেসর আসলে পর্যায়ক্রমে সবদিকই কন্সিডার করবেন।এমন হতে পারে যে আপনার সিজিপিএ অনেক ভালো বা আপনি কোন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে এসেছেন কিন্তু প্রফেসরের আপনাকে পছন্দ হয়নি। আবার এটাও হতে পারে যে আপনি গড়পড়তার একটা প্রোফাইল নিয়ে ইমেইল করে খুব পজেটিভ রিপ্লাই পেয়েছেন। কোরিয়ান অধ্যাপকরা সবসময় অনির্দেশ্য থাকে। সুতরাং, আপনি রিপ্লাই পাবেনই এবং সবাই আপনাকে রিপ্লাই দিবে, এই চিন্তাচেতনা থেকে ফিরে আসতে হবে।
ভুল ধারণা – ৪। আমার প্রোফাইল তো তুলনামূলক বেশ ভালো।আর ইমেল ও তো কম করলাম না, কেউ তো রিল্লাই দেয় না। আসলে আমাকে দিয়ে হবে না।
আপনি আবার ভুল করলেন। রিপ্লাই পাওয়া বা না পাওয়া নিয়ে তিনটি বিষয় খুবই কমন।এক, বেশিরভাগ কোরিয়ান প্রফেসর আপনাকে কোন রিপ্লাই-ই দিবে না। কারন হতে পারে উনার ভ্যাকেন্সি নাই বা উনার আপনার প্রোফাইল পছন্দ হয়নি।আপনাকে তারা আমেরিকার প্রফেসরদের মতো গড়পড়তায় রিপ্লাই দিয়ে আবেদন করতে বলে মূলা ঝুলাবে না। দুই, কিছুকিছু প্রফেসর আপনাকে রিপ্লাইয়ে না করে দেবে এবং কারনটা জানিয়ে দেবে।এক্ষেত্রে যেটা হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে সেটা হচ্ছে উনার ল্যাবে ভ্যাকেন্সি নাই। তখন আপনি উনাকে ধন্যবাদ দিয়ে একটা ফিরতি ইমেইলে লিখতে পারেন যে ভবিষতে উনার ল্যাবে স্টুডেন্ট লাগলে আপনাকে যেন দয়া করে জানায়। তিন, কিছু প্রফেসর আপনাকে তখনই রিপ্লাই দিবে যখন সে ভাবছে যে আপনাকে তার ল্যাবের একজন পটেনশিয়াল স্টুডেন্ট হিসাবে কন্সিডার করা যায়। আর কোরিয়ান প্রফেসররা যদি আপনাকে আবেদন করতে বলে, তার মানে হচ্ছে আপনাকে উনি নিতে ইচ্ছুক।
ভুল ধারণা – ৫। একটা ডিপার্টমেন্টের প্রায় সব প্রফেসরকেই ইমেইল করতে হবে। কেউ না কেউ তো রিপ্লাই দিবেই।
দয়া করে এই কাজটি কেউ করবেন না। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ডিপার্টমেন্টের একাধিক প্রফেসরকে একসাথে ইমেইল করা উচিত নয়। আপনি যদি সবাইকে একই কথা লিখেন যে আপনি তাদের কাছে আসতে চান এবং তাদের ল্যাবে কাজ করতে চান তাহলে বিষয়টা অনেকটা এরকম যে আপনি একই সংগে অনেকজন কে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলেন কারন সবাই খুব ভালো। সুতরাং এটা করা যাবে না। একই ডিপার্টমেন্টের প্রফেসররা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন যে, কে উনাকে ইমেইল করলো বা কে আসতে চাই উনার ল্যাবে। আপনি যদি একই সংগে একই ইমেইল সবাইকে পাঠান, তাহলে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন অবস্থা কি দাঁড়াবে। যেটা করতে পারেন, সেটা হচ্ছে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন পটেনশিয়াল প্রফেসরদের নিয়ে একটা শর্ট-লিস্ট করতে পারেন। তারপর সেখান থেকে সিরিয়াল অনুযায়ী প্রথমজনকে ইমেইল করলেন।উনি যদি রিপ্লাই না দেন, তাহলে একসপ্তাহ পর একটা ফলো-আপ ইমেইল করলেন।তারপরও যদি পরবর্তী সাত কার্য দিবসে রিপ্লাই না পান, সেক্ষেত্রে আপনার লিস্টের ২য় প্রফেসরকে ইমেইল করতে পারেন।সেক্ষেত্রে ইমেইল এর ভাষাটা একটু পরিবর্তন হওয়া বাঞ্ছনীয়।
ইমেইলের আদ্যপান্ত
ইমেইল শিষ্টাচার সব শিক্ষার্থীদের কাছে একটা সংগ্রামের মত। ইমেইলে কি কি লিখবেন সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তদ্রুপ ইমেইলটা কিভাবে লিখবেন সেটাও গুরুত্ববহ।কারন, একজন শিক্ষার্থীর চোখে আপনার ইমেইলটা আপনি যেভাবে দেখেন অন্যপ্রান্তে বসে পেশাদার প্রফেসররা সেভাবে নাও দেখতে পারে।সব কোরিয়ান প্রফেসর ইমেইল সম্পৃক্ত শিষ্টাচার নিয়ে খুবই দৃঢ় মনোভাব পোষণ করেন। নিচে একটা ইমেইল এর প্রথম থেকে শেষ অবধি পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হয়েছে।
১। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন
আপনি যখন ইমেইলটি লিখবেন তখন আপনাকে কিছুকিছু বিষয়ে খুবই সচেতন থাকতে হবে। যেমন ধরুন, প্রতিটা শব্দের যথাযথভাবে সঠিক বানান এবং প্রতিটা লাইন ব্যাকরণগতভাবে সঠিক থাকা অত্যাবশ্যকীয়। পাশাপাশি, আপনার শব্দ সিলেকশন অবশ্যই একাডেমীক হতে হবে এবং শব্দের টোন হতে হবে মার্জনীয়। এক্ষেত্রে আপনার ইংরেজি ভাষায় মোটামুটি ভালো দখল থাকা সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার যদি মনেহয় যে আপনি ইংরেজি ভাষায় ব্যাকরণগত ভাবে দুর্বল বা আপনার ব্যাকরণ ত্রুটিপূর্ণ, তাহলে একজন প্রফেসরের সাথে আপনার পেশাদার যোগাযোগ রাখা কঠিন হবে।আপনি কিভাবে লিখছেন সেটার উপরেও নির্ভর করে প্রফেসর আপনাকে রিপ্লাই দেবেন কি না। আপনার যদি এজাতীয় কোন দুর্বলতা থাকে এবং লেখা ত্রুটিমুক্ত কিনা সেটা নিশ্চিত হতে, ইমেইল পাঠানোর আগে লেখাটা প্রুফরিড করে নিতে পারেন।
তবে, ইমেল লেখার বিষয়টা কখনোই বানান আর ব্যাকারণে সীমাবদ্ধ না।আপনার ইমেইল কন্টেন্টের স্পষ্টতাও আর একটা গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার। আপনার ইমেইলে যদি স্পষ্টভাবের অভাব থাকে তাহলে একজন কোরিয়ান প্রফেসর সেটা কখনই গুরুত্বসহকারে নিবেন না। আরেকটা বিষয় উল্লেখ্য যে, অনেক সময় প্রফেসরদের কাছে পুরোপুরি ছোট হাতের অক্ষরে এবং কোন বিরামচিহ্ন ছাড়াই প্রচুর ইমেইল আসে, সম্ভবত এই ইমেইলটি একটি স্মার্ট ফোনে লেখা হয়েছিল। যাইহোক, স্মার্টফোন দিয়ে প্রফেসরদের ইমেইল করার সময় যথেষ্ট সতর্ক থাকা প্রয়োজন।কারণ এক্ষেত্রেই ইংরেজি লেখাজনিত ভুল বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমার পরামর্শ হচ্ছে, আপনার যদি স্মার্টফোন ছাড়া অন্যকোন বিকল্প থাকে, তাহলে এটাকে পরিহার করুন। অন্যথা, ইমেলটি পাঠানোর পূর্বে কয়েকবার সতর্কতার সাথে পড়ুন।
২। আপনার ইমেইল এড্রেস কেমন হবে?
স্ব-সচেতনতাই মূলত এখানে গুরুত্বপূর্ণ।ইমেইল পাঠানোর ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই আপনার স্টুডেন্ট ইমেইল ব্যবহার করবেন (যদি থাকে)।উদাহরণ স্বরুপ, আপনি যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন, তাহলে পেশাদার যোগাযোগের ক্ষেত্রে আপনি আপনার স্টুডেন্ট ইমেইল আইডি (someone@du.ac.bd) ব্যবহার করবেন। যদি না থাকে, তাহলে নিজের নাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মিল করে একটা ব্যক্তিগত ইমেইল আইডি খুলে নিতে পারেন। যেমন ধরুন,
someone@example.com
lastname.firstname@example.com
someone.birthdate/year@example.com
মনে রাখবেন কখনই শিষ্টাচার বহির্ভূত কোন ইমেইল আইডি প্রফেসরদের ইমেইল করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করবেন নাহ। কেউ কেউ coolboy@example.com বা, angelX@example.com এর মত ইমেইল আইডি ব্যবহার করেন। আবার অনেকে ফেসবুকের জন্য যে ইমেইল আইডি ব্যবহার করেন সেটাই প্রফেসরদের ইমেইল করতে ব্যবহার করেন।এগুলো সম্পূর্ণভাবে বর্জনীয়। এই ধরনের ইমেইল আইডি আপনার প্রফেসরের কাছে আপনার সম্পর্কে কোন পেশাদার বার্তা প্রেরণ করেনা যেটা শিষ্টাচার বহির্ভূত।
ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহারের আর একটা বড় সমস্যা হচ্ছে “স্পাম ফিল্টার”। আপনার ব্যক্তিগত ইমেইল আইডি থেকে পাঠানো ইমেইলটি আপনার প্রফেসরের স্প্যামে চলে যাওয়ার তীব্র সম্ভাবনা রয়েছে যেটা নির্দেশ করে যে প্রফেসার না চাইলেও আপনার ইমেইলটি অপঠিত অবস্থায় থেকে যাবে এবং পরবর্তীকালে ডিলিট হয়ে যাবে। আপনি হয়ত ভাববেন প্রফেসর আপনার ইমেইল এ্যভয়েড করেছেন, কিন্তু আসল বিষয় হল উনি জানেনই না যে আপনি তাকে ইমেইল করেছেন।সর্বপরি এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আপনি যে ইমেইল আইডি ব্যবহার করছেন সে সম্পর্কে আপনি কতটুকু সচেতন বা কতটুকু সচেতনাতার সাথে বিবেচনা করছেন।
৩। প্রফেসরের কোন ইমেইল আইডি সিলেক্ট করবেন?
একজন প্রফেসর একাধিক ইন্সটিটিউট এর সাথে সংযুক্ত থাকতে পারেন, সেক্ষেত্রে ইন্সটিটিউট অনুযায়ী উনার একাধিক ইমেইল আইডি থাকতে পারে।ধরে নিন, আপনার প্রফেসর “X Biomed, Inc” নামক একটা কোম্পানি বা “Y Research Institute” নামক একটা গবেষণাভিত্তিক ইন্সটিটিউট এর সাথে জড়িত। পাশাপাশি, উনি “Z University” এর প্রফেসর। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, আপনি ইমেইল করার সময় প্রফেসরের কোন ইমেইল আইডিকে উল্লেখ করবেন। সহজ ভাবে বললে, আপনি উনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেইল আইডিতেই ইমেইল করতে পারেন।কারণ, প্রফেসরদের ল্যাব সাধারণত তার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ।আরও একটা সহজ টিপ হচ্ছে, প্রফেসরের ল্যাব ওয়েবসাইটে যান, তারপর সেখানে তার কন্টাক ডিটেইলস-এ যে ইমেইল আইডি পাবেন সেটাইতেই ইমেইল করুন। অনেকে ইমেইলে একজন প্রফেসরের একাধিক ইমেইল এড্রেস উল্লেখ করেন।আমার মতে এটা না করায় শ্রেয়।মনে রাখবেন, প্রত্যেক কোরিয়ান প্রফেসরের কমপক্ষে দুইটি ইমেইল এড্রেস থাকে; এক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেইল এড্রেস এবং দুই, নাভের-এর (দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যবহৃত সর্বাধিক কমন পোর্টাল সার্ভিস) ইমেইল এড্রেস। নাভেরের ইমেইল এড্রেস সাধারণত এরকম হয়: someone@naver.com যেটা তাদের পার্সোনাল ইমেইল এড্রেস হিসাবে ব্যবহার হয়।আপনি প্রফেসরকে ইমেইল করার পর আপনার লেখা ইমেইলটা যেন প্রফেসরের চোখ এড়িয়ে না যায় সে জন্য তার প্রফেশনাল ইমেইল এড্রেসের পাশাপাশি পার্সোনাল ইমেইল এড্রেস ও যোগ করে দিতে পারেন।
৪। ইমেইলের সাবজেক্ট কি হবে?
ইমেইলের সাবজেক্ট হল আপনার পুরো ইমেইলের সারসংক্ষেপ।তাই ঠিকমত ইমেইলের সাবজেক্ট লেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাবজেক্ট এমন হতে হবে যেন প্রফেসর সাবজেক্ট পড়েই বুঝতে পারেন আপনি কি জন্য তাকে ইমেইল করেছেন। আবার ইমেইলের সাবজেক্ট পেশাদার হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।ইমেইলের সাবজেক্ট একেকজন একেকভাবে লেখেন।যেমন আপনি যদি পিএইচডি তে আসতে চান, তাহলে লিখতে পারেন Prospective Ph.D. Student । আবার যদি মাস্টার্সে আসতে চান, লিখতে পারেন Prospective Masters Student । এখানে সমস্যা হল প্রফেসরের ল্যাব ওয়েবসাইটে শুধুমাত্র লেখা থাকে তার ল্যাবে ভ্যাকেন্সি আছে কিনা বা উনি পটেনশিয়াল স্টুডেন্ট চাচ্ছেন কি না। মাস্টার্স বা পিএইচডি এর কথা আলাদা ভাবে খুব কম প্রফেসরের ওয়েবসাইটে লেখা থাকে। ধরা যাক, আপনি বাংলাদেশ থেকে অনার্স শেষ করেছেন এবং কোরিয়াতে একজন প্রফেসরের ল্যাবে আপনি মাস্টার্স স্টুডেন্ট হিসাবে আসতে চান। কিন্তু প্রফেসরের ল্যাবে নিদির্ষ্ট প্রজেক্টের অধীনে দীর্ঘ সময়ের জন্য একটা স্টুডেন্ট লাগবে। সেক্ষেত্রে প্রফেসর পিএইচডি স্টুডেন্টই চাইবেন। আপনি যেহেতু লিখেছেন মাস্টার্স স্টুডেন্ট হিসাবে আসতে চান, সেহেতু প্রফেসর আপনার ইমেইল ইগনর করতে পারে। আপনি সেফটি হিসাবে Prospective Graduate Student সাবজেক্টটি লিখতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রফেসরের আপনাকে ইগনর করার সম্ভাবনা কম।এই সাবজেক্ট পছন্দের আর একটা উপকারী দিক হচ্ছে প্রফেসরের ল্যাবে মাস্টার্স বা পিএইচডি যে ধরনের স্টুডেন্টই দরকার হোক না কেন আপনার সাথে প্রফেসরের কথোপকথন আগাবে। যেহেতু আপনি মাস্টার্স খুঁজছেন কিন্তু প্রফেসরের দীর্ঘ সময়ের জন্য স্টুডেন্ট প্রয়োজন সেক্ষত্রে আপনি উনাকে মাস্টার্স-লিডিং পিএইচডি এর অপশনটা দিতে পারেন।
এবার আসা যাক কিছু ভূল সাবজেক্ট এর দিকে।অনেকে লেখেন, Want to research with you বা Looking for funding opportunities । আমার ব্যক্তিগত মতমত হচ্ছে কখনই এই ধরনের সাবজেক্ট ব্যবহার করবেন নাহ। কারন, আপনার দরকার ডিগ্রীর পাশাপাশি রিসার্চ এক্সপেরিয়েন্স।পিএইচডি এর পর পোস্ট-ডক যারা করেন তারাই শুধুমাত্র রিসার্চ করেন। আপনার ক্ষেত্রে লেখাপড়া আর রিসার্চ দুইটাই দরকার।অন্যদিকে, প্রথম ইমেইলে টাকা পয়সা নিয়ে কথা বলা শিষ্টাচার বহির্ভূত একটা কাজ। আর আপনি যখন কোন প্রফেসরকে লিখবেন, এটার মানেই হচ্ছে আপনি উনার প্রজেক্টে কাজ করতে চান এবং সেই প্রজেক্ট থেকেই আপনার বৃত্তি দেওয়া হবে। এটা খুবই সাধারণ। সুতরাং আলাদা করে ফান্ডিং এর কথা সাবজেক্টে উল্লেখ করার দরকার নাই।
৫। প্রফেসরকে কিভাবে সম্বোধন করবেন?
আপনি আপনার প্রফেসরকে প্রথম ইমেইলে কিভাবে সম্বোধন করছেন সেটার উপর অনেকাংশে নির্ভর করে আপনি রিপ্লাই পাবেন কিনা।এটা আবার আপনার পেশাদার আচারণেরও পরিচয় দেয়।ইউরোপ-আমেরিকার মত আপনি প্রফেসর কে Hi/Hello দিয়ে শুরু করতে পারবেন নাহ। যেমন কোন আমেরিকান প্রফেসরের নাম যদি হয় স্মিথ, তাহলে আপনি সহজেই তাকে Hi Smith দিয়ে শুরু করতে পারেন। কিন্তু এটাকে একজন কোরিয়ান প্রফেসর বেয়াদবি মনে করেন।তারা স্টুডেন্টদের থেকে একটি আনুষ্ঠানিক অভিবাদন এবং পেশাদার অবস্থানের স্বীকৃতি আশা করেন। যেমন ধরুন,কোন প্রফেসরের নাম যদি হয় Don Yuk Park, তাহলে আপনি তাকে Dear Prof. Park বলে সম্বোধন করতে পারবেন।কোরিয়ান প্রফেসরদের শেষ নামটাই বংশগত নাম যেটা দিয়ে সাধারণত তাদেরকে ডাকা হয়। তবে আপনি যদি তাদের শেষ নাম নিয়ে স্বীদ্ধান্তহীনতায় ভুগেন, তাহলে আমার সাজেশন হচ্ছে আপনি তার পুরো নামটাই ব্যবহার করতে পারেন (যেমন, Dear Prof. Don Yuk Park)। এটা হচ্ছে কোন কোরিয়ান প্রফেসরকে সম্বোধন করার সবচেয়ে সাধারণ উপায়।
অনেকেই আবার লেখেন Dear Dr. Someone; এটা মনেরাখা খুব জরুরী যে কোরিয়াতে পোস্ট-ডক বা রিসার্চ প্রফেসরদের ডক্টর বলে ডাকা হয়। আপনি একজন প্রফেসর কে ডক্টর বলে সম্বোধন করতে পারবেন না।আপনি যাকে লিখছেন উনার পেশাদার পজিশন সহকারী বা সহযোগী অধ্যাপক যাই হোক না কেন, তিনি তাকে প্রফেসর বলে সম্বোধন করাটাকেই পছন্দ করেন।একইভাবে আপনি মিস্টার বা মিসেস/মিস দিয়েও কোন প্রফেসরকে সম্বোধন করতে পারবেন না। কারন মিস বা মিসেস বলে সম্বোধন করলে প্রফেসরের বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তন হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। আর একটা দিক উল্লেখ করা প্রয়োজন।সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের প্রফেসরদেরকে স্যার বলে ডাকার একটা অভ্যাস থেকে যায়। এটা যত সম্ভব ইমেইলে পরিহার করা উচিত।
যাইহোক, নিজের প্রশংসা অন্যের মুখ থেকে কে না শুনতে চায়! প্রফেসরদের সম্বোধন করার আর একটা দিক হচ্ছে আপনি লিখতে পারেন, Dear Amazing Scientist Prof. Park (এই ধরনের সম্বোধন তখনই করবেন যখন আপনার প্রফেসরের রিসার্চ ফিল্ড নিয়ে আপনার দক্ষতা অনেক এবং তার কাজ দেখে আপনি খুবই মুগ্ধ।আপনি তার কাজ নিয়ে যখন গুরুগম্ভীর কোন মন্তব্য করতে পারবেন। অন্যথায়, তেল দেওয়া সবাই বুঝে)। তবে আপনি যেভাবেই প্রফেসরকে সম্বোধন করুন না কেন প্রফেসরের নামের বানানের ক্ষেত্রে আপনাকে খুবই সচেতন এবং যত্নবান হতে হবে।
৬। প্রফেসরকে অভিবাদন কিভাবে করবেন?
যেহেতু কোনও ইমেলের অভিবাদন সাধারণত দুটি শব্দ থাকে, তাই এটি উপেক্ষা করা সহজ। তবে, অভিবাদনটি যত্ন সহকারে বিবেচনা করা দরকার, বিশেষত এটি আপনার ইমেলের প্রথম লাইন।প্রথমে নিশ্চিত করুন যে আপনি এটি অন্তর্ভুক্ত করেছেন! আপনার ইমেইলের মূল অংশ পড়ার আগেই এধরনের শুভেচ্ছা আপনার ভদ্রতা ও পেশাদার আচারনের পরিচয় দেয়। আপনি আপনার নিজের মত করে প্রফেসরকে অভিবাদন জানাতে পারেন। আবার,আপনি পরিস্থিতি সাপেক্ষে একটি নৈমিত্তিক অভিবাদন ও জানাতে পারে। ধরা যাক, আপনি করোনার এই পরিস্থিতির মধ্যে কোন একজন প্রফেসরকে ইমেইল করেছেন।আপনি লিখতে পারেন, I hope you are well amide this COVID-19 situations.
৭। ইমেইলের বডি প্যারাগ্রাফ কেমন হবে?
৭. ১। প্রথম প্যারাগ্রাফ
প্রফেসরকে অভিবাদন জানানোর পর আপনার কাজ হবে আপনার নিজের পরিচয়টা দেওয়া। লেখার সময় আপনাকে মনে রাখতে হবে যে একজন প্রফেসর সারাদিনে প্রচুর ইমেইল পান। একই সাবজেক্টের অধীনে এই ইমেইল গুলো সারা পৃথিবীর বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের থেকে আসে। আপনি যখন আপনার প্রফেসরকে ইমেইল করবেন এবং নিজেকে সঠিকভাবে সনাক্ত না করেন, তখন একজন প্রফেসরের কাছে আপনাকে মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এমনিতেই অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নাম কোরিয়ানরা উচ্চারণ করতে পারেন নাহ যেমন ধরুন মৃত্যুঞ্জয় বা জগন্নাথ।আবার আমাদের অনেকের নামের সাথে যেহেতু মোঃ, হোসেন, ইসলাম ইত্যাদি থাকে, সেহেতু আপনি যদি আপনার পুরো নাম না লেখেন সেক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। একজন কোরিয়ান প্রফেসর বাংলাদেশ থেকে শতশত শিক্ষার্থীর ইমেইল পান, তাই পাসপোর্ট বা সার্টিফিকেট অনুযায়ী আপনার পুরো নাম লেখাটাই কাম্য।
আপনার নামের পরে আপনার পরিচয়টা ছোট করে দিয়ে দিবেন। যেমন আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন ইত্যাদি, ইত্যাদি। বাংলাদেশে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং, কত কঠিন এ্যাডমিশন টেস্ট দিয়ে চান্স পেয়েছিলেন, আপনার ব্যাচে সিজিপিএ অনুযায়ী আপনি কত নাম্বারে ছিলেন এসব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এর পরে এক লাইনেই লিখবেন যে আপনি তার কাজে খুবই মুগ্ধ এবং তার সাথে কাজ করতে চান। সর্বোচ তিন চার লাইনেই আপনাকে এই প্যারাগ্রাফ শেষ করতে হবে।
৭.২। মূল প্যারাগ্রাফ
এটা হচ্ছে আপনার ইমেইলের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রফেসর আর আপনার কাজের উপর ভিত্তি করে এই প্যারাগ্রাফ গুলো সাধারনত তিনটা ভাগে বিভক্ত।
ক। আপনার এবং প্রফেসরের কাজের ধরন একই রকম
খ। আপনার এবং আপনার প্রফেসর কাজের ধরন আলাদা কিন্তু আপনি উনার সাথে কাজ করতে চান
গ। আপনার কোন রিসার্চ এক্সপেরিয়েন্স নেই। আপনি আপনার অনার্সের সাবজেক্টের সাথে ম্যাচ করে এমন কোন প্রফেসর পেলেই তার ল্যাবে চলে যাবেন।
প্রথমেই আসা যাক সেকশন “ক” এবং “খ” নিয়ে। নিয়ে। এই দুইটা সেকশনের প্যারাগ্রাফ প্রায় একই। সেকশন দুটিতে তে আপনি প্রফেসরের কাজ নিয়ে লিখবেন। খুব অল্প কথায় নিজের কাজের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করবেন। নিজের পেপারের টাইটেল দিতে যাবেন না। তবে পাবলিকেশন থাকলে সেটা উল্লেখ করতে পারেন। ভালো হয় যদি আপনি প্রফেসরের কোন কাজ নিয়ে তাকে প্রশ্ন ছুড়ে দিতে পারেন। প্রশ্নটা হবে আপনি জানতে চান এরকম। এতে করে প্রফেসর বুঝবে যে আপনি তাকে লেখার আগে তার কাজ নিয়ে বিস্তারিত ঘাটাঘাটি করেছেন। পাশাপাশি, তার ল্যাবে আপনার কাজ করার তীব্র আকাঙ্ক্ষার বিষয়টিও প্রকাশ পাবে। তবে প্রশ্ন করতে গিয়ে এমন কিছু লিখবেন না যাতে প্রফেসরের কাজে ভূল আছে বা আরো কি কি করার দরকার ছিল উনারা করেনি এরকম কিছু ইংগিত দেয়। আপনার পেপার না থাকলে আপনার আন্ডারগ্রেডের থিসিস নিয়েও কথা বলতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন যে আপনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রফেসরের কাজের সাথে আপনার কাজের যোগসূত্র তৈরী করা। আপনার আর আপনার প্রফেসরের কাজের যদি পার্থক্য থাকে, তাহলে আপনি আপনার ইন্টারেস্টের কথা তাকে জানাতে পারেন। আপনার পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা দিয়ে আপনি তার কাজে কিভাবে কন্ট্রিবিউট করতে চান সেটাও জানাতে পারেন।
সেকশন “গ” এর জন্য লেখাটা হবে একটু অন্যরকম। আপনি প্রফেসরের কাজ নিয়ে পড়েছেন (কি কি পড়েছেন সেটা উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক) এবং তার সাথে কেন কাজ করতে চান সেটাও লিখতে হবে। আপনার নিজেকে নিয়ে যদি লেখার কিছু না থাকে তাহলে আন্ডারগ্রেডে আপনার মেজর কিছু সাবজেক্টের কথা উল্লেখ করতে পারেন যাতে করে প্রফেসর বুঝে যে তার রিসার্চ ফিল্ড নিয়ে আপনার মৌলিক ধারনা আছে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার ব্যাচেলর ছিলো কৃষিবিদ্যা তে এখন আপনার প্রফেসর কাজ করেন ভূট্টার নতুন জাত উদ্ভাবনে।আপনি এক্ষেত্রে আপনার ব্যাচেলরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্ট যেমন প্ল্যান্ট বায়োকেমিস্ট্রি বা প্ল্যান্ট মলিকুলার বায়োলজি এর মত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্টের কথা উল্লেখ করতে পারেন।
পরের প্যারাগ্রাফে আপনি কি কি বিষয় নিয়ে কাজ করতে চান, কেন চান, এই প্রফেসর বা তার ল্যাবের সুযোগ সুবিধা কিভাবে আপনার কাজ করতে সাহায্য করবে সেটা ২-৩ লাইনে লিখে দিবেন।
৭.৩। শর্ট প্রফাইল
শর্ট প্রোফাইল হচ্ছে আপনার সিভি বা রিজিউমের বোল্ড পয়েন্ট গুলো পয়েন্ট আকারে দেওয়া। যেমন আপনার সিজিপিএ, পেপারের সংখ্যা, কত বছরের রিসার্চের অভিজ্ঞতা আছে, ইংলিশ স্কোর এইগুলো। অনেক ক্ষেত্রে প্রফেসরদের আপনার সিভি ডাউনলোড করে পড়ার সময় থাকে নাহ।আর আপনার যদি মনেহয় যে আপনার এমন কিছু আছে যার কারনে আপনি উনার ল্যাবের একজন পটেনশিয়াল ক্যান্ডিডেট তাহলে আপনি সিভিতে শর্ট প্রোফাইল ব্যবহার করতে পারেন।
এটি একটি ছোট বা তুচ্ছ নোটের মতো মনে হতে পারে তবে এটি অবশ্যই আপনার প্রোফাইলকে ইতিবাচক এবং অনুকূল করে তুলবে। বিশেষ করে যে ইমেইল গুলোর মধ্যে এগুলো উল্লেখিত হয় না।
৭.৪। শেষ প্যারাগ্রাফ
শেষ প্যারাগ্রাফে আপনি প্রথমেই লিখবেন যে, আপনি উনার রিসার্চ ফিল্ডে একজন পটেনশিয়াল কন্ট্রিবিউটর হতে পারেন যদি আপনি তার সাথে কাজ করার সুযোগ পান। আপনার ইমেইলে সমস্ত লেখার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রফেসরকে স্কাইপি তে নিয়ে আসা। একবার যদি আপনি প্রফেসরকে ইন্টার্ভিউ এর জন্য রাজি করাতে পারেন, তাহলে আপনার চান্স অনেক বেড়ে যাবে। আপনি কথাটা এভাবে লিখতে পারেন যে, যদিও আপনি আপনার সিভি বা রিজিউম সংযুক্ত করে দিয়েছেন কিন্তু আপনি সরাসরি আপনার পিএইচডি এর প্ল্যান নিয়ে উনার সাথে কথা বলতে চান। সবশেষে, আপনি প্রফেসরকে তার সময়ের জন্য ধন্যবাদ দিয়ে আপনার আপনার লেখা শেষ করবেন।
৮। সাইন-অফ
আপনি ইমেইলের সাইন-অফ করার আগে প্রফেসর কে উদ্দ্যেশ্য করে একটি প্রশংসামূলক বিদায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরী। তবে এক্ষেত্রে কোন অযৌক্তিক সাইন অফ ব্যবহার করবেন না। একটি সাধারণ সাইন-অফে নৈমিত্তিক এবং পেশাদার ভারসাম্য রাখতে “Best Regards” বা “Sincerely” এর মতো কিছু শব্দ ব্যবহার করতে পারেন। ভুল করেও “Cheers” এর মতো কোন অপেশাদার শব্দ লিখবেন না। কারণ আপনি যাকে ইমেইল করছেন তার সাথে আপনার বন্ধু সুলভ আলাপচারিতা নেই। এরপর, আপনি আপনার পুরো নাম লিখে শেষ করুন। অনেকে শুধু নিজের নামের প্রথম অংশ লেখেন যেটা যত সম্ভব পরিহার করা উচিত।
৯। স্যাম্পল ইমেইল ফরমেট
পরের পৃষ্ঠায়সাধারণ শিক্ষর্থীদের জন্য একটা ফরমেট দেওয়া হলো। দয়া করে কেউ কপি-পেস্ট করবেন না।
Dear Amazing Scientist Prof. X,
Congratulation on your contribution to biomedical research by publishing more than 200 research works with above 10000+ citations (please check the citations of your professor) and an ever-growing plethora of original patents.
I am (your full name), a recent BSc graduate from (name of your university), Bangladesh, planning to apply as a Master-leading Ph.D. applicant for spring 2021 in the (name of the department you’re intending to apply) at (name of the university you’re intending to apply). I am writing to you because my research interests are exactly similar to yours and I am highly fascinated by your research domains.
Before writing you, I carefully looked at your lab website and studied your recent papers entitled “A novel mechanism is involved in cationic lipid-mediated functional siRNA delivery” published in Nano Letters in 2018. I believe that the twenty-first century’s cancer research has jumped a step further because of your finding on the intracellular function of siRNA. In my case, I found that a novel pathway mediated by direct fusion between siRNA lipoplexes and plasma membrane is responsible for the functional delivery of siRNA into the cell. Even though, endocytosis pathway contributed most to the cellular uptake functions of siRNA lipoplexes. Practically, I intend to find out answers to several open questions that are aligned to immunogenetics, antitumor T cell function, negative checkpoints, and so many which seem exactly similar is being currently conducted by your team.
Currently, I am working as a (your current status, i.e. Research Assistant) in the (name of your employer, i.e. Cancer Biology Lab, DU). I hope I am mature enough to considerably contribute to your research and continue your succession. Please look at my short profile below.
BSc in Biochemistry CGPA xx/4.0
Research Experience: x years
No. of Publication: xx
IELTS: xx
I have also attached my full profile here which provides a review of my training and research experiences and will be happy to furnish you with any further details about me or my competency. Please find the attached. I would be really grateful if you could give me the floor to discuss my research plan with you in a Skype interview.
Thanking you for your time. I am eagerly waiting for your reply.
Sincerely,
Your full name
১০। ব্রাউজার এক্সটেনশন ব্যবহার করবেন কিনা!
ইমেইল ট্র্যাকিং সিস্টেম এমন একটি বিষয় যেটা ব্যবহার করে আপনি জানতে পারবেন প্রফেসর আপনার ইমেইলটি খুলে দেখেছেন কি না। এটা খুবই উপকারী একটা জিনিস। তবে এরকম কিছু ব্যবহার করলে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন ইমেইলের সাথে এক্সটেনশনের ট্যাগ না যায়।
১১। ইমেইল কখন পাঠাবেন?
প্রফেসরকে ইমেইল করার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিবেন আপনার ইমেইল যেন অফিস টাইমে যায়। অফিস টাইম বলতে সকাল নয়’টা। অর্থাৎ, আপনাকে এমন সময় ইমেইলটা পাঠাতে হবে যেন প্রফেসর তার ইমেইল খুললেই আপনার ইমেইলটা সবার উপরে থাকে। আপনি যদি এসময়ের বাইরে ইমেইল করেন তাহলে দুটি ব্যাপার ঘটবে।এক, খুব দ্রুত ইমেইল এর রিপ্লাই পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দুই, উনি যখন ইমেইল চেক করবেন তখন দরকারী-অদরকারী ইমেইলের ভিড়ে আপনার ইমেইল ধামা-চাপাও পড়ে যেতে পারে।
১০.১। কিভাবে জিইমেইল শিডিউলার ব্যবহার করবেন?
দক্ষিণ কোরিয়ার সময় বাংলাদেশ সময়ের চেয়ে তিন ঘন্টা এগিয়ে। মানে হচ্ছে, বাংলাদেশে যখন সকাল ছয়’টা কোরিয়াতে তখন সকাল নয়’টা। একটা ইমেইল করার জন্য কি তাহলে সারা রাত জেগে থাকতে হবে? উত্তর হচ্ছে না।আপনি এধরণের সময় জটিলতা এড়াতে ইমেইলের টাইম শিডিউল অপশনটির সাহাজ্য নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, জিমেইলের টাইম শিডিউল কিভাবে ব্যবহার করবেন তা নিচে চিত্র আকারে দেওয়া হল।
১২ । যদি আপনি ইমেইলের রিপ্লাই না পান তাহলে কি করবেন?
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, একজন কোরিয়ান প্রফেসরকে ইমেইল করার পরে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা হচ্ছে মেইলের রিপ্লাই না পাওয়া। আপনি যদি মেইলের রিপ্লাই না পান সেক্ষেত্রে আপনার কি করা উচিত? অপেক্ষা করবেন? কতদিন? এই সব প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে আপনি যদি এক সপ্তাহের মধ্যে রিপ্লাই না পান তাহলে প্রফেসর কে একটা ফলো-আপ ইমেইল করতে পারেন। সৰ্বোচ্চ তিন চার্ লাইনের মধ্যে উনাকে একটা রিমাইন্ডার দেওয়া যে আপনি উনাকে ইমেইল করেছিলেন এবং উনার রিপ্লাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। ফলো-আপ করতে গিয়ে আবার রচনা লিখতে বসবেন না। একটা আদর্শ ফলো-আপ ইমেইল কেমন হতে পারে তার নমুনা নিচে দেওয়ার আগে একটা কথা বলে রাখি, আপনি ফলো-আপ ইমেইল করার পরেও যদি প্রফেসর আপনাকে রিপ্লাই না দেন তাহলে আপনি ঐ ডিপার্টমেন্টের অন্য প্রফেসরকে ইমেইল করতে পারেন।
Dear Prof. X,
I emailed you back on August 19th, 2020, regarding my chances of joining your lab as a Graduate Research Assistant. Perhaps you were busy. I understand your busy schedule. However, I am still waiting for your reply.
Sincerely,
Your full name
আপনার উচ্চশিক্ষার এই পথচলায়, দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বিএসএকে-এর পক্ষ থেকে জানাই অগ্রীম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
© শাতিল শাহরিয়ার
রাসায়নিক এবং জৈবিক প্রকৌশল বিভাগ
কোরিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ট্রান্সপোর্টেশন