আমেরিকা বা যে কোন দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য চেকলিস্ট

আমেরিকা কিংবা যেকোনো দেশে উচ্চশিক্ষার চেকলিস্ট, যেটা যে কারোই প্রয়োজন তার অ্যাকাডেমিক প্রোফাইল বানাতে-

চেকলিস্ট:

আমেরিকায় হায়ার স্টাডির জন্য মূল যে উপাদানগুলো দরকার:

১. একটা অনার্স ডিগ্রি। সিজিপিএ ৩.০০ হলে ভালো। ৩.০০ এর কম হলেও উপায় আছে।

২. জিআরই/জিম্যাট স্কোর। জিআরইতে অন্তত ৩০০ স্কোর রাখা উচিৎ।

৩. টোয়েফল/আইইএলটিএস। টোয়েফলে মিনিমাম ৮০ অথবা আইইএলটিএসে মিনিমাম ৬.৫ রাখা উচিৎ।

৪. স্টেটমেন্ট অফ পারপাস। (SOP)

৫. রিকমেন্ডেশন লেটার। বড়জোর তিনটা লাগতে পারে। তাই অনার্সের শুরু থেকেই শিক্ষকদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা উচিৎ।

৬. সিভি/ রেজ্যুম।

৭. কোন সাবজেক্টে/ফিল্ডে ডিগ্রি নিতে/রিসার্চ করতে ইচ্ছুক, সে সম্পর্কে ভালো ধারণা।

৮. চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা। অনেকের এর থেকে কমও লাগতে পারে। এটা গড় হিসাব।

৯. ধৈর্য্য।

১০. ভালো যোগাযোগ এবং গুগলকে ভালোভাবে ব্যবহার করার দক্ষতা। (ভার্সিটি, প্রফেসর খোঁজা; প্রফেসর, ভার্সিটির সাথে যোগাযোগের জন্য)

মূল এই উপাদানগুলোর পাশাপাশি আরও কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো থাকলে প্রোফাইল আরও শক্তিশালী হয়।

১. পাবলিকেশন।

২. চাকরি/ ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতা।

৩. টিচিং/রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের অভিজ্ঞতা।

৪. প্রজেক্ট।

৫. যে বিষয়ে পড়তে চান সেই বিষয় সম্পর্কিত সফটওয়্যারগুলো অপারেট করার জ্ঞান।

পাবলিকেশন, গবেষণার অভিজ্ঞতা:

এগুলো অ্যাপ্লিকেশনের মূল উপাদান (Compulsory) নয়। তবুও, গবেষণার অভিজ্ঞতার বিকল্প কিছু হয় না। সত্যি বলতে, যার লক্ষ্য উচ্চশিক্ষা তার জন্য রানিং স্টুডেন্ট থাকা অবস্থাতেই সুযোগ থাকলে এই অভিজ্ঞতাগুলো অর্জন করা উচিৎ।

Related post: Click

কম সিজিপিএ থাকলে:

গুরুত্বপূর্ণ কথাটা হল, আমেরিকায় গ্র্যাজুয়েট অ্যাডমিশনের প্রত্যেকটা অ্যাপ্লিকেশন ইউনিক। প্রতিটা অ্যাপ্লিকেশনের সবগুলো উপাদান বিবেচনা করে অ্যাডমিশন দেওয়া হয়। সিজিপিএ কম থাকলে অন্যান্য উপাদানগুলো শক্তিশালী করে অ্যাডমিশন পাওয়া সম্ভব। সিজিপিএ ৩.০০ থাকলেই আমেরিকার ৯০ ভাগ ভার্সিটিতেই অ্যাপ্লাই করার যোগ্য আপনি। বেশ কিছু ইউনিভার্সিটি আছে যেগুলো ৩.০০ এর কম সিজিপিএ গ্রহণ করে। কাজেই, কেউ যদি আপনাকে বলে- কম সিজিপিএধারী বলে আপনি হায়ার স্টাডিতে যেতে পারবেন না তাহলে সেই কথা তখনি উড়িয়ে দিন। উল্লেখ্য, এটা ঠিক কম সিজিপিএ থাকলেও অন্যান্য জায়গায় ভালো করে অ্যাডমিশন পাওয়া যায় কিন্তু ভালো সিজিপিএর বিকল্প কিছু নেই।

যদি রানিং স্টুডেন্ট থাকা অবস্থাতেই বুঝে যান আপনার পক্ষে কিছুতেই সিজিপিএ ৩.০০ এর উপরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় তাহলে তখন থেকেই দীর্ঘ সময় নিয়ে জিআরই এর প্রস্তুতি নিন যেন ভালো স্কোর করতে পারেন। চেষ্টা করুন দুয়েকটা পাবলিকেশন করতে। টিচারের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলে তার অধীনে TA/ RA এর কাজ করতে পারেন। বিভিন্ন অনলাইন কোর্স করে স্কিল অর্জনের চেষ্টা করুন।

কম সিজিপিএ এবং ক্যারিয়ার:

চাকরি নাকি উচ্চশিক্ষা!

গ্রুপে প্রায়ই কিছু প্রশ্ন আসে।

আমার সিজিপিএ তিনের নিচে/ খুব কম। অথবা আমার প্রোফাইল এই, আমি কি অ্যাডমিশন/ ফান্ড পাবো?

আমার সিজিপিএ কম। আমার কি চাকরির ক্যারিয়ারে যাওয়া উচিৎ নাকি উচ্চশিক্ষা?

প্রায়ই বিভিন্ন গ্রুপে বেশ রসালো একটা তর্ক হয়। বিসিএস এবং হায়ার স্টাডির তুলনা। বিসিএস একটা চাকরি, একটা ক্যারিয়ার। হায়ার স্টাডি অন্য একটা ক্যারিয়ারে যাওয়ার জন্য আরও পড়াশোনা। দুটো দুই রকমের জিনিস। এখানে কোনো তুলনা চলে না। দুটোই নিজেদের জায়গায় ইউনিক। কেউ কারও প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। যার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য যেখানে সে সেখানেই চেষ্টা করবে। তর্ক বিতর্কের কিছু নেই এখানে। কেউ এএসপি হয়ে মনে মনে রিসার্চ করছে কিভাবে আধুনিক উপায়ে অপরাধ কমানো যায় আবার কেউ হায়ার স্টাডি শেষে রিসার্চ করছে কিভাবে কম খরচে গরীব দেশের জন্য একটা ভ্যাকসিন বানানো যায়। দুই ধরনের রিসার্চই আমাদের দরকার। এ নিয়ে বিতর্ক ছেলেমানুষী।

আপনার যদি উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার উদ্দেশ্য থাকে তবে এটা নিয়েই বিভিন্ন রিসার্চ করা উচিৎ। গ্রুপে প্রোফাইল শেয়ার করে ফান্ড/অ্যাডমিশন পাওয়া যাবে কিনা সে প্রশ্ন করলে কেউই উত্তর দিতে পারবে না। কেউ কোনো উত্তর দিলেও সেটা হবে গত বছরগুলোর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলা উত্তর, সম্পূর্ণ উত্তর নয়। অ্যাডমিশনের সিদ্ধান্ত একমাত্র ডিপার্টমেন্টের অ্যাডমিশন কমিটির। ধরা যাক, আপনার সিজিপিএ ২.৮০। এরপরেও আপনার হয়তো এমন একটা স্টেটমেন্ট অফ পারপাস লেখার ক্ষমতা আছে যার উপর ভিত্তি করে আপনি অ্যাডমিশন পেয়ে যেতে পারেন।

আবার অনেকে প্রশ্ন করেন, আমি সদ্য অনার্স/মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। জিআরই ৩১০+, টোয়েফল ১০০+ থাকলে অ্যাডমিশন, ফান্ড পাবো কিনা। এ ধরনের প্রশ্ন অবান্তর। কারণ, প্রথম কথা, আপনি এই স্কোরগুলো সিকিউর করতে পারবেন এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। দ্বিতীয়ত, আপনি গ্রুপে পোস্ট করেছেন নিশ্চয়ই আপনার হায়ার স্টাডির ইচ্ছা আছে বলেই। এখন কেউ যদি আপনার এই প্রশ্নের উত্তরে বলে, না সম্ভব না, তবে কি আপনি অন্য লোকের কথা শুনে নিজের ক্যারিয়ারের ডিসিশন নিয়ে নেবেন?

মোদ্দা কথা হল, আপনাকে সম্পূর্ণ প্রোফাইল কমপ্লিট করতে হবে। তারপর সবার সাথে (গ্রুপে অভিজ্ঞদের পরামর্শ, ভার্সিটিতে মেইল করা) কথা বলতে হবে। অসম্পূর্ণ প্রোফাইল শেয়ার করে সেটার ফিডব্যাকের ভিত্তিতে নিজের ভবিষ্যতের ডিসিশন নেওয়া ঠিক নয়। অ্যাডমিশন প্রসেসটা ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ এমন না। হায়ার স্টাডিতে যেতে হলে আপনাকে পানিতে নামতেই হবে। আমেরিকায় ৪২০০ বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কাজেই, আপনার সামনে সুযোগ চার হজার দুইশোটা।

Post Credit- Shamim Sharif Romel

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *