যারা বিদেশে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক, তাদের মনে তৈরি হওয়া অন্যতম একটি প্রশ্ন হলো, স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যায়? আমরা সবাই বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু, স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যায়, তা সবাই হয়তো জানি না।
আগে থেকে আবেদন করলে স্কলারশিপ পাওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। তবে, তার জন্য নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা থাকতে হবে। এই যোগ্যতা আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম। আপনি যদি পিএচডি এর জন্য যান সেক্ষেত্রে এক রকম। আবার আপনি যদি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করতে যান সেক্ষেত্রে অন্যরকম।
বিদেশে সাধারণত গ্রাজুয়েশন, পোস্ট গ্রাজুয়েশন এবং পিএচডি অর্জন করার জন্য মানুষ বেশি যায়। তা আপনি যেই জন্যই যান না কেন, আজকে আমি আপনাদের জানাব স্কলারশিপ পাওয়ার আদ্যোপান্ত। তাহলে, দেরি না করে চলুন জানা যাক, স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যায়।
স্কলারশিপ কখন পাওয়া যাবে?
আপনি উচ্চ মাধ্যমিক বা স্নাতক শেষে বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে পারবেন। পার্থক্য হচ্ছে, উচ্চমাধ্যমিক শেষে যখন স্কলারশিপের আবেদন করবেন, তখনকার প্রসেস স্নাতকোত্তর পর্যায়ের স্কলারশিপের প্রসেসের চাইতে একটু সহজ। যেই পর্যায়ের স্কলারশিপই চান না কেন, যা যা দরকারী জিনিস বা রিকোয়্যারমেন্টস আছে সেগুলো আপনাকে পালন করতে হবে।
তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন রিকোয়্যারমেন্ট থাকে। যেমন ক্রীড়া ও প্রতিভাভিত্তিক স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আপনাকে একটি লাইভ পারফরম্যান্স বা পোর্টফোলিও বা একটি ক্রীড়াবিষয়ক ডকুমেন্টারি সাবমিট করতে হতে পারে৷ কিন্তু, সাধারণ বা সাবজেক্টভিত্তিক স্কলারশিপের জন্য এরকম কিছু করতে হবে না। স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যায় এই প্রশ্নের প্রথম উত্তর এটাই।
স্কলারশিপের ওয়েবসাইট
স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যায় এটার ২য় ধাপ হলো, স্কলারশিপের খোঁজ খবর রাখা। স্কলারশিপের জন্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট আছে। তবে, আপনাদের সুবিধার্থে এখানে দুটি ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দিচ্ছি।
এই দুইটি সাইটে ঢুকলে স্কলারশিপের অনেক অফার পাবেন:
উচ্চমাধ্যমিক শেষে স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যায়
আপনি যদি উচ্চমাধ্যমিক শেষে স্কলারশিপ নিয়ে স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করার জন্য বিদেশে যেতে চান, তাহলে উচ্চমাধ্যমিকে থাকতেই নিজেকে ডেভেলপ করার চেষ্টা করবেন। তাহলে, আপনার জন্য স্কলারশিপ পাওয়া সহজ হবে।
চলুন জেনে নেয়া যাক কোন বিষয়গুলোতে আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে:
• ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, ও কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য এসএটি স্কোর চাওয়া হয়। সুতরাং কলেজ জীবন থেকেই এসএটি স্কোরের দিকে মনোযোগ দিন।
• বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক, স্বেচ্ছাসেবামূলক, সামাজিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকলে সেটা ভর্তির জন্য সহায়ক হবে। তাই, চেষ্টা করবেন বিভিন্ন অলিম্পিয়াড বা ভলান্টিয়ারিং বা সমাজসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে। এসব কাজের সনদ আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
• স্কলারশিপের আবেদনে রেকমেন্ডেশন লেটার অতি জরুরি একটি বিষয়। কাজেই এমন একজনকে দিয়ে রেকোমেন্ডেশন লেখাবেন, যিনি আপনাকে ভালমত চিনেন, হতে পারে সেটা আপনার স্কুল-কলেজের শিক্ষক, বা কোন প্রভাবশালী বা আলোচিত ব্যক্তিত্ব। যিনি লিখবেন তাকে আপনার লার্নিং ইন্টারেস্ট এবং সামাজিক দক্ষতা এবং নেতৃত্বদানের প্রকৃতি সম্পর্কে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
• IELTS এবং TOEFL স্কোর আপনার ইংরেজির দক্ষতা প্রমাণ করবে। এই দুটি বিষয়ের উপন ভালভাবে মনোযোগ দিন এবং স্কোর বাড়ান।
• সবশেষে আবেদনপত্রের সাথে নিজের আগ্রহের কথা লিখবেন – কেন বিদেশে পড়তে চান, আপনার পড়াশোনার মূল লক্ষ্য কি, ভবিষ্যতে কোন বিষয়ে কাজ করতে চান ইত্যাদি।
স্নাতক শেষে কিভাবে স্কলারশিপ পাওয়া যায়
দেশের বাইরে স্কলারশিপ নিয়ে স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি করতে হলে, আপনাকে স্নাতক পর্যায় থেকেই এই ব্যাপারে খোঁজখবর রাখতে হবে। এমনি যদি ওয়েবসাইটও ঘুরে দেখেন তাহলেও আইডিয়া পাবেন। স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যায়, এই প্রশ্নে উত্তর এখানেই পেয়ে যাবেন।
১. স্নাতক পর্যায়ে গবেষণা ও নিবন্ধের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিবেন। কারণ, বিদেশে অ্যাডমিশনের জন্য এটা কাজে লাগবে। যে বিষয়ে গবেষণা করেছেন সেটার উপর লেখা জার্নাল বা থিসিস পেপার বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশের চেষ্টা করবেন। এক্ষেত্রে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা সিনিয়রদের সাহায্য নিতে পারেন, তারা আপনাকে গাইড করবে।
২. আপনি বিদেশে গিয়ে যে বিষয়ে পড়তে ইচ্ছুক, সে বিষয়ে যদি আপনার চাকরির অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে অ্যাডমিশন এবং স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে এটা প্লাস পয়েন্ট হবে। যেমন আপনি মিডিয়া স্টাডিজ নিয়ে পড়তে ইচ্ছুক, স্নাতকে পড়ার সময়েই মিডিয়া ফিল্ডে ইন্টার্নশীপ করেছেন বা কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্সটা প্রসেসে উল্লেখ করবেন।
৩. বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ ও ফেলোশিপের অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়। আপনাকে আগে থেকেই সেসব বিভাগের শিক্ষক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপকের সাথে মেইলে যোগাযোগ করে ফান্ডের জন্য আবেদন করতে হবে।
৪. মেইলে আপনাকে উল্লেখ করতে হবে কোন বিষয়ে পড়তে চান, কেন পড়তে চান, কোন শিক্ষক বা অধ্যাপকের অধীনে গবেষণা করতে চান ইত্যাদি।
৫. স্কলারশিপ দাতা প্রতিষ্ঠান আপনাকে দুইভাবে স্কলারশিপের অর্থ দিতে পারে – আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে অথবা সরাসরি চেকের মাধ্যমে। যদি আপনি স্কলারশিপ পান, তাহলে আপনাকে স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে যে আপনি কোন মাধ্যমে স্কলারশিপটা রিসিভ করতে চান।
৬. আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা যার অধীনে গবেষণা করেছেন স্নাতক পর্যায়ে, তার কাছ থেকে রেকমেন্ডেশন লেটার আনতে হবে। যিনি লেটার লিখবেন তাকে আপনার মেধা ও প্রজ্ঞা সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে লিখতে হবে।
৭. IELTS, TOEFL, GRE, GMAT এই স্কোরগুলো স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি পড়াশোনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বাইরের দেশে বিজনেস স্টাডিজ নিয়ে পড়তে চাইলে GRE এবং GMAT এর উপর প্রস্তুতি শুরু করবেন স্নাতকে ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে।
স্কলারশিপের জন্য রেজাল্ট কতটা গুরুত্বপূর্ণ
স্কলারশিপের আবেদন করার জন্য রেজাল্ট খুব একটা বড় কোন ফ্যাক্টর না। হয়তো আবেদনের সময় একটি নির্দিষ্ট জিপিএ/সিজিপিএ চাইবে, কিন্তু সেটাই কোন ফাইনাল বিষয় না। ভাল ইংরেজি জানা এবং চমৎকার মেইল রাইটিংয়ের উপর স্কলারশিপ অনেকটাই নির্ভর করে। কাজেই এই দুটি জিনিসে দক্ষ হওয়ার চেষ্টা করবেন।
আর যদি রেজাল্টের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য চান, তাহলে বলব দেশে থাকতে পড়াশোনাটা ভালমত চালিয়ে যান। যাতে মোটামুটি ভাল একটা রেজাল্ট করতে পারেন। পাশাপাশি দেখুন আপনার রেজাল্টের সাথে কোন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের রিকোয়্যারমেন্ট ম্যাচ করছে।
আপনার প্রকাশিত জার্নাল বা থিসিস পেপার, রেকমেন্ডেশন লেটার, স্টেটমেন্ট অফ পারপাজ, IELTS/TOEFL/GRE/GMAT/SAT স্কোর ঠিকঠাক থাকলেই স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যায়, এ নিয়ে আশা করি আর প্রশ্ন নেই।
Related post: Click here
কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মনে রাখবেন
• স্টেটমেন্ট অফ পারপাজ/রেকমেন্ডেশন লেটার/ইমেইলের বিষয়বস্তু কখনোই অন্যেরটা কপি করে বসিয়ে দিবেন না। সম্পূর্ণ নিজের মেধা, চিন্তাভাবনাকে কাজে লাগিয়ে লিখবেন।
• স্টেটমেন্ট অফ পারপাজ প্রথম অবস্থায় যেটা লিখেছেন সেটা কখনোই ফাইনাল ধরে বসে থাকবেন না। কাজেই এটা লেখার ক্ষেত্রে অনেকবার রিভাইজ দিবেন এবং লিখবেন। এভাবে করতে করতে ফাইনালে আপনার স্টেটমেন্ট অফ পারপাজের কাঠামো ও ভাষা ঠিকঠাক হবে।
• আপনার গবেষণা বা জার্নাল কখনোই নিচু মানের বা অপরিচিত কোন জার্নালে প্রকাশ করবেন না। না হলে আপনার ভর্তি বাতিল হতে পারে। একইভাবে আপনার গবেষণা সম্পূর্ণ আপনারই হতে হবে, কোন কপি-পেস্ট চলবেনা।
• আবেদন ফি জমা দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ডের ডিটেইলস যেন ঠিকঠাক থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। কারণ ফি কার্ডের মাধ্যমেই জমা দিতে হবে আগে।
• বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য ট্রান্সক্রিপ্ট বা নম্বরপত্র যখন ইমেইলে জমা দিবেন সেটা যেন পুরোপুরি অথেনটিক এবং ইংরেজিতে লেখা থাকে। অনেকসময় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থার্ড পার্টির মাধ্যমেও ট্রান্সক্রিপ্টের সত্যতা যাচাই করে।
• বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তিন সেমিস্টারে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করে – ফল, স্প্রিং, এবং সামার। সাধারণত ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জন্য ফল সেমিস্টারই আদর্শ, যা আগস্ট থেকে শুরু হয়। কোন কারণে আপনি যদি ফল সেমিস্টারে ভর্তি হতে ব্যর্থ হোন, তাহলে পরের নিকটবর্তী সেমিস্টারে ভর্তির চেষ্টা করুন।
• কখনো একটি ভার্সিটির আশায় না থেকে বিভিন্ন ভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করুন।
• যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান, সেই প্রতিষ্ঠানের ভর্তি তথ্য সম্পর্কে জানতে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট, ইউটিউব, বা ফেসবুক থাকলে সেখানে চোখ রাখুন। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য অনলাইন সেশন পরিচালনা করে। কাজেই কোন প্রতিষ্ঠান কিভাবে ভর্তি করছে সেদিকে পূর্ণ খেয়াল রাখুন।
পরিশেষে
এই ছিল আজকে স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যায় নিয়ে লেখা। আসলে কাগজপত্র বা যোগ্যতার চাইতে ভাগ্য হচ্ছে বড় ব্যাপার। ভাগ্য সহায় না থাকলে যতই চেষ্টা করুন স্কলারশিপ সহজে পাবেন না।
তাই বলে কি চেষ্টা করা থেকে থেমে থাকবেন? অবশ্যই না। চেষ্টাও সমানভাবে চালিয়ে যাবেন। তো এই ছিল আজকের আয়োজন। আশা করি লেখাটা আপনাদের কাজে লাগবে। স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যায়, এই নিয়ে আরও কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন। ভাল লাগলে লেখাটি শেখাটি শেয়ার করবেন, ধন্যবাদ।
2 replies on “স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যায়?”
MOHAMMAD OZAIR ULLAH December 6, 2023 at 7:36 am
Well written
MOHAMMAD OZAIR ULLAH December 6, 2023 at 7:37 am
Well written.