এইচএসসি পাশ করার পরে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য করণীয় কি?

তোমরা যারা এই মূহুর্তে HSC 2023 পরীক্ষা শেষ করতে যাচ্ছো/আপনাদের যাদের সন্তানেরা এই ধাপে আছে তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ।

১) তুমি যদি পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাও তবে তা চেষ্টা করবে এমনটিতে চান্স পেতে যেখানে তুমি বাসা থেকে গিয়ে নিয়মিত ক্লাস করতে পারো। তার বাহিরে হলে পাবলিকে পড়ার অলীক মায়া ত্যাগ করো!

২) মোটামুটি মানের একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে (পারিবারিক সামর্থ্য অনুযায়ী) ভর্তি হয়ে যাও। এবং সাথে সাথেই পুরোধমে IELTS/TOEFL/SAT/** এর প্রিপারেশন নিতে থাকো। টার্গেট ৬-১২ মাস সর্বোচ্চ। এর মধ্যেই ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপানে স্টুডেন্ট ভিসায় চলে আসো।

৩) যারা অত্যন্ত গরীব, যাদের পাবলিকে পড়ার বিকল্প সামর্থ্য নেই। তার নিশ্চয়ই পড়বে। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে হলে না থাকার। প্রয়োজনে কারও বাসায় তাদের সন্তানদের পড়ানোর বিনিময়ে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকবে। তবু্ও হলে থাকা যাবে না। তারপর একাধিক টিউশন করে হলেও ক্যাম্পাস থেকে দূরে প্রাইভেট বাসায় থাকা শুরু করবে। তবে একান্তই যদি শুরুতে তা না করতে পারো তবে হলে থাকবে সর্বোচ্চ ৬ মাস! এর মধ্যে টিউশন নিয়ে চলে যাবে।

৪) যে সকল অভিভাবক তাদের সন্তানদের বাধ্য হয়ে পাবলিকে পাঠাচ্ছেন তাদের প্রতি অনুরোধ আপনার সন্তানকে যেন বাধ্য হয়েও কোন পলিটিকাল পার্টির সাথে যুক্ত হতে না হয়ে তার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করুন। যদি তা মহান সৃষ্টিকর্তার দলও হয়! তাকে বলবেন একদম মাথা নিচু করে এমন ভাবে পড়াশোনা করতে যেন গোটা দুনিয়ার বড় বড় কোম্পানি/বিশ্ববিদ্যালয় তাকে চাকরি দিতে বা মাস্টার্সে স্কলারশিপ দিয়ে নিয়ে যেতে ডাকতে থাকে! আর পরবর্তীতে যাতে পরিবারের আর কাউকে নিজ দেশে অন্যায়ের সামনে মাথা নিচু কর থাকতে না হয়!

৫) ছাত্র জীবনে যতোটুকু সম্ভব যোক্তিক মানসিকতা, সততা ও দক্ষতা আছে এমন মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব করবে। এখানে যদি ভুল নির্বাচন করে ফেলো।দেরি হলে জীবনের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হবে। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব!

আমি জানি এটি পড়ে অনেকেই দেশপ্রেম, এই প্রেম ওই প্রেম, আমি এ বলার কে প্রশ্ন তুলবেন! আপনি তুলতেই পারেন। কিন্তু বাস্তবতাকে উপেক্ষা করতে পারবেন না। ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে পারবেন না।

আর হে না বলা কোটি অভিজ্ঞতা থেকে একটু বলি! আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছিলাম! সেখান থাকতে যে ছাত্র রাজনীতি দেখেছি, শিক্ষক-কর্মচারী-ব্যবসায়ী-এলাকার রাজনীতি দেখেছি তা কোন সভ্য সমাজে থাকতে পারেনা। এই পরিবেশ থেকে সুস্থভাবে গ্রো হওয়া প্রায় অসম্ভব। আমাকে এখন যখন কেউ বলে আমি চবিতে পড়ি দোয়া করবেন। আমি বলি, “চবি থেকে জীবন নিয়ে যদি ডিগ্রিটা শেষ করে ফিরে আসতে পারও তবে তোমার থেকে সফল আর কেউ হতে পারেনা!

” অনেকেই এই কথার অর্থ না বুঝে হয়তো বলবেন, “তার মানে কি চবিতে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী প্রতিবছর মারা যায়!” আমি উত্তরে বলব পরিসংখ্যানে প্রকাশিত রিপোর্টে নিশ্চয়ই যায় না। কিন্তু যে ভয়ের মধ্য দিয়ে একটি ছাত্রকে প্রতিটি মুহূর্ত কাটাতে হয়। তা মৃত্যুর চেয়ে কম কি!? অনেকেই হয়তো এও ভাবছেন খালি সাধারণ ছাত্ররাই হয়তো এই ভয়ের মধ্যে থাকে। না ভাই, অসাধারণ ছাত্রছাত্রীরাও (রাজনীতি করা) সেইম আতংকের মধ্যে থাকতে দেখেছি সেখানে! যাইহোক আশাকরি অন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর পরিবেশ অনেক ভালো!!! দেশ গঠনে ছাত্র থেকেই রাজনীতির মতো নিষ্ঠুর কাজ করতে হবে এটি মারাত্মক একটি ভুল ধারণা।যেখানে প্রতিদিন দেশের জাতীয় নেতারা বলে বেড়াচ্ছেন, “রাজনীতে শেষ বলে কিছু নেই!” কল্পনা করা যায় এমন একটি নীতিহীন কাজে তারা বাচ্ছা বয়সে আপনাকে ঠেলে দিচ্ছে। যে বয়সে আপনি সবার সাথে প্রেম ভালোবাসা বিনিময় করবেন সেই বয়সে আপনাকে দলে দলে ভাগ করে অস্ত্র হাতে রাস্তায় একের বিরুদ্ধে অন্যকে নামিয়ে দিচ্ছি! ভাবা যায়। একদম শেষে আব্দুল্লাহ আবু সাইদের বইয়ে পড়া দুটো লাইন বলি এমন ছিলো যে, “রাজনীত হচ্ছে পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম জিনিস! এটি কোমল ছাত্রদের মধ্যে ঢুকলে সেই কোমলা বিনষ্ট হয়!” আমার কথা আজ হয়তো আবেগের বশবর্তী হয়ে আমাদের অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রী ভাইবোনেরা উড়িয়ে দিতে পারো! কিন্তু আজি হইতে ৫ টি বছর, মাত্র ৫ টি বছর পরেই ইহার মর্মার্থ নিশ্চয়ই বুঝিতে পারিবে!

শুভকামনা!

Billal Mahmud

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *