আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আসতে গেলে কিছু কাগজপত্র লাগে। যার ধারণা ও প্রস্তুতি আগে থেকে নিয়ে রাখা ভালো। তাহলে শেষ মূহুর্তে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। আজকের লেখাতে সেই বিষয়গুলি লেখার চেষ্টা করবো।

১। পাসপোর্ট ও পাসপোর্টের মেয়াদ

তুমি যেহেতু দেশের বাহিরে আসার প্ল্যান করছ, তাহলে তোমার অবশ্যই পাসপোর্ট থাকা জরুরী। তাই সময়ের আগে, এটি প্রস্তুত রাখা ভালো। ভালো খবর হলো, এখন পাসপোর্টে ১০ বছর মেয়াদ থাকে, তাই একটু আগে করে ফেললেও মেয়াদ নিয়ে তেমন ভাবতে হয় না। আমার পরামর্শ হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল ইয়ারে সবার পাসপোর্ট বানিয়ে নেওয়া দরকার। আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী একা একা পাসপোর্ট করতে, প্রায় ২ মাস সময় লেগে যায় (নরমাল ডেলিভারি হলে), আর প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হয়।

অনেকেই আছো, যাদের আগে থেকেই পাসপোর্ট আছে, তাদেরকে বলব এটার মেয়াদ ঠিক আছে কি না দেখে নিও। সচরাচর, ভিসা দেওয়ার সময় নূন্যতম এক-বছরের মেয়াদ থাকতে হয়। তাই, যদি তুমি ফল-২০২৪ এ আসতে চাও, তাহলে হয়ত ভিসা পাবা জুলাই ২০২৪ থেকে। সেক্ষেত্রে তোমার পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে জুলাই ২০২৫ অবধি থাকা জরুরী। যদি না থাকে, তাহলে সময় থাকতে রিনিউ করে নেওয়া দরকার।

২। একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট

এটা শুধুমাত্র যারা পাস করে ফেলেছ তাদের জন্য। বিদেশের যে বিশ্ববিদ্যালয়েই তোমার এডমিশন হোক না কেন, সেখানে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট লাগে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সরবরাহ করা হয়। তবে, এটা কখনো কখনো সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় (যেমন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) গুলোতে ১৫-২০ দিন সময় নেয়। তাই আগে-ভাগে দুই-এক কপি তুলে রাখা ভালো। আর একটা কথা, প্রফেসরদের ইমেইল দেওয়ার সময়, এই ট্রান্সক্রিপ্ট এটাস্ট করে দিলে, সেটার একটা আলাদা গুরুত্ব থাকে। তাই আমি মনে করি, ইমেইল দেওয়ার আগে কমপক্ষে এক-কপি তুলে রাখা দরকার।

৩। ভালো একটা CV (Curriculum Vitae)/Resume

উচ্চশিক্ষার আবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে CV। তাই এটার ব্যাপারে বিশেষ যত্নবান হওয়া দরকার। CV একজন ছাত্রকে প্রফেসর এর সামনে তুলে ধরে। তাই অনেক সময় নিয়ে, বিভিন্ন জনের CV Sample দেখে এটি বানানো উচিৎ। তাড়াহুড়া করে ভালো CV বানানো সম্ভব নয়। কারো কারো একটা ভালো CV বানাতে বছর লেগে যায়। CV বানানোর কিছু আইডিয়া পাওয়া যাবে Europass CV Template থেকে। তবে CV বানানোর জন্য, অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরী। তাই আমি মনে করি, নিজের মত একটা CV লিখে, অভিজ্ঞ কাউকে পাঠানো যেতে পারে।

কেও যদি আমাকে পাঠাও, আমি যতটা পারি সাহায্য করার চেষ্টা করবো। তবে হহ্যাঁ, ফিডব্যাকের জন্য কখনো অপেক্ষা করতে হতে পারে।

৪। Motivation Letter / SOP (Statement of Purpose)

এটিও সিভির (CV) সমান গুরুত্বপূর্ণ একটা ডকুমেন্ট। যাতে মূলত একজন ছাত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড এবং তার সাথে আবেদনকৃত উচ্চশিক্ষা কোর্সের একটা সংযোগ স্থাপন করতে হয়। সেটার জন্য একটা সুপরিকল্পিত প্ল্যান প্রয়োজন। জোড়াতালি দিয়ে, যেকোন রকমের একটা সম্পর্ক স্থাপন করে লিখে দিলে হয় না। কারণ, SOP প্রফেসররা খুব ভালো করে পড়ে দেখেন। প্রত্যেকটি লাইন। তাই এটি যত্ন নিয়ে লিখতে হয়। এখানে আসলেই তুমি কি চাও এবং তোমার ভবিষৎ প্ল্যান কী তা ফুটিয়ে তুলতে হয়। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, তোমার স্বপ্নের সাথে আবেদনকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রফেসরের কী সম্পর্ক তাও বর্ণনা করতে হয়। তাই, SOP লেখার আগে, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রফেসরদের সম্পর্কে ভালো ধারণা তৈরি করে নিতে হবে। তাই এ ব্যাপারে পড়াশোনা জরুরী। একটা ভালো SOP ছাড়া ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফান্ডিং পাওয়া একরকম অসম্ভব।

আমার পরামর্শ হলো, CV এবং SOP লেখার জন্য কমপক্ষে দুইমাস সময় হাতে রাখা দরকার। তাই যারা পরবর্তী ফলে আবেদন করতে চাও, এখনি এগুলো প্রস্তুত করার সময়।

৫। Recommendation Letter / Reference Letter

পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ কাগজ হলো Recommendation Letter / Reference Letter। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় গুলি ৩ টি করে Recommendation Letter চাই। যার দুইটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি শিক্ষক থেকে, এবং অপরটি কোন সহকর্মী বা অফিসের বস বা সমাজ-কর্মী এদের থেকে নেওয়া ভালো। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ আবেদনকৃত ছাত্র/ছাত্রীর একাডেমিক মান নিয়ে বলবেন। আর অপরটি তার কাজের প্রতি মনোযোগ, অথবা কর্মী হিসাবে নিষ্ঠা অথবা সে কতটা সামাজিক এগুলোর মূল্যায়ন করবে।

এখন আসি, আমাদের দেশের প্রফেসরগণ বাইরের প্রফেসরদের মত শুধুমাত্র একটা/দুইটা কোর্স আর রিসার্স নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন না। তাদের অনেক দ্বায়িত্ব থাকে। তাই এটা ভালো হয়, তুমি যে শিক্ষকের সাথে Recommendation Letter নিতে চাও, তাঁর সাথে তোমার সম্পর্ক মূল্যায়ন করে নিজেই ড্রাফট লিখে রাখ। এরপর সময় হলে, উক্ত শিক্ষকে দিলে, উনি অবশ্যই সংশোধন করে দিবেন। যেহেতু এতে স্যারের সময় বাচবে তাই উনি হয়ত একটু খুশিও হবেন। তাই নিজে ড্রাফট লিখে রাখাটা খুবই জরুরী।

আজ এতটুকুই। পরবর্তীতে আরো কিছু পরামর্শ নিয়ে লিখব ইনশা-আল্লাহ। সবাই ভালো থাকো, আর স্বপ্ন ও সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে যাও।

মো: আরিফুল ইসলাম

পি এইচ ডি গবেষক

বিঙ্গহ্যামটন ইউনিভার্সিটি, নিউ-ইয়র্ক, আমেরিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *